শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
বি.সি.জি বাংলাদেশ কুচিপুড়ি ডান্স এসোসিয়েশন ও নৃত্যকুড়ি নৃত্যালয়ের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী উদযাপন। বাংলাদেশ বাউল সমিতি হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নতুন কমিটি গঠন। সাজিদ পরদেশীকে সভাপতি, এম এ বাছিত সাধারণ সম্পাদক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত উচ্চাঙ্গ নৃত্যের প্রশিক্ষক, অভিযোগ অনিয়মের। হবিগঞ্জ নারী উদ্যোক্তাদের ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত। হবিগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিউনিটির উপদেষ্ঠা সাইফুদ্দিন জাবেদকে সংগঠনের নতুন কার্যকরী কমিটির ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান। বানিয়াচং উপজেলা প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত যাত্রী এবং ড্রাইভারদের মধ্যে বাকবিতন্ডা, বাড়ছে জনদূর্ভোগ। হবিগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিউনিটির প্রধান উপদেষ্ঠা জিয়াউল হাসান তরফদার মাহিনকে সংগঠনের নতুন কার্যকরী কমিটির ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান। ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং এবং ভাষা প্রশিক্ষণকোর্সের হবিগঞ্জ জেলা’র সকল শিক্ষার্থীদের বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে অযুক্তিকভাবে টমটম ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে হবিগঞ্জ যাত্রী কল্যান পরিষদের বয়কট

ওষুধ প্রতিনিধিদের অবাধ প্রবেশ, সাংবাদিকে ‘না’

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৪২৮ বার পঠিত
ফাইল ছবি

বাবাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক দেখাতে নিয়ে এসেছেন যাত্রাবাড়ির সুফিয়া খাতুন। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করলেন। চিকিৎসক দেখাতে পারলেও শেষ হলো না তার ভোগান্তি।

চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হতেই তাদের ঘিরে ধরলেন কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ)। তার বাবাকে দেয়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে শুরু হলো মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের টানাটানি। তারা দ্রুত নিজেদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিলেন।

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের এমন আচরণে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করলেন সুফিয়া। কিন্তু এর প্রতিকারের কোনো উপায় তার জানা নেই। ফলে বিরক্তি নিয়েই বাবাকে নিয়ে বিএসএমএমইউয়ের বহির্বিভাগ (আউটডোর) থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

শুধু সুফিয়া খাতুন নয়, বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাসেবা নিতে প্রায় প্রত্যেককেই এমন হয়রানিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। রোগী ও তাদের স্বজনদের সময় সংকট ও দুর্ভোগ অগ্রাহ্য করেই রোগীদের দেয়া প্রেসক্রিপশন দেখতে রীতিমতো ঘিরে ধরেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা।

বিএসএমএমইউতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের এমন আনাগোনা ও দৌরাত্ম্য হরহামেশাই চোখে পড়ে। কিন্তু তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা এখানে কার্যত নেই। তবে উল্টো চিত্র গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে, এ হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশে রয়েছে ‘বিধি-নিষেধ’।

গত শনিবার সকালে সরেজমিনে বিএসএমএমইউয়ের আউটডোরের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন রোগী চিকিৎসক দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। টিকিটের ক্রম অনুযায়ী নির্ধারিত বিভাগে চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করছেন তারা। চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হতেই সেখানেই, চিকিৎসকের দরজার সামনে রোগীকে ঘিরে ধরছেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা।

এ দৃশ্য দেখার পর একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোম্পানি থেকে আমাদের পাঠানো হয়, ডাক্তার আমাদের ওষুধ লিখছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য। শুধু আমি নই, প্রতিটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের এখানে পাবেন। সবার একই দায়িত্ব, প্রেসক্রিপশন পরীক্ষা করা। কারণ এর ওপর আমাদের পদোন্নতিও নির্ভর করে।’

এভাবে রোগীদের ঘিরে প্রেসক্রিপশন দেখা ও ছবি তুলতে কেউ বাধা দেয় না-এমন প্রশ্নে ওই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, ‘কেন বাধা দেবে? আমরা আসি সবাই জানে। কোম্পানি থেকে ডাক্তারদের বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হয়। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তারা পরিদর্শনে আসলে তখন সমস্যা হয়। সে সময় আমরা বাইরে থাকি।’

তার সঙ্গে কথা শেষ করে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের এভাবে একের পর এক রোগী বের হতেই ঘিরে ধরে প্রেসক্রিপশন পরীক্ষা করা এবং সেটার ছবি তোলার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে গেলেই বাঁধে বিপত্তি। ছবি তুললেই এ প্রতিবেদকের কাছে ছুটে আসেন বিএসএমএমইউয়ের এক কর্মী।

নিজেকে নিপ্পন পরিচয় দিয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি ছবি তুলছেন কেন? আপনি কি সাংবাদিক? জানেন না এখানে সাংবাদিকদের ছবি তোলা নিষেধ। আপনি স্যারের রুমে আসেন।’

এরপর তিনি সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমামের কক্ষে এই প্রতিবেদককে নিয়ে যান। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ছবি তোলার কথা হাসান ইমামকে জানাতেই তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি এখানে কীভাবে প্রবেশ করলেন? কার অনুমতি নিয়েছেন? এখানে সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ। এখানে ছবি তুলতে হলে ডিরেক্টর স্যারের অনুমতি লাগবে। আপনি অনুমতি নিয়ে এসেছেন?’

জবাবে হাসান ইমামকে উদ্দেশ্য করে এই প্রতিবেদক বলেন, ‘সাংবাদিক আসতে অনুমতি লাগবে, আর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ আসতে অনুমতি লাগবে না? মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা কার অনুমতি নিয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি করছেন এবং ছবি তুলছেন? তারা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে পারলে, আমি কেন তাদের ছবি তুলতে পারব না?’

এ সময় হাসান ইমাম বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুললে অন্যায় করেছেন। তাই বলে তাদের ছবি তুলে আপনিও অন্যায় করবেন? এভাবে আপনার ছবি তোলা অন্যায় হয়েছে।’

এরপর নিপ্পন নামের ওই কর্মীকে দিয়ে আনসার সদস্য কামালকে ডেকে আনান হাসান ইমাম। আনসার সদস্যকে ধমকে তিনি বলেন, ‘এখানে বাইরের লোক ঢুকছে কীভাবে? তোমরা কোথায় থাক?’

আনসার সদস্য কামালকে ধমক দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেই ওই চিকিৎসক টেলিফোনে কাউকে ফোন দেন। ফোনে তিনি বলেন, ‘স্যার এখানে একজন সাংবাদিক এসে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা রোগীর প্রেসক্রিপশন দেখছিল তার ছবি তুলেছে। স্যার এভাবে বাইরের লোক ঢুকে পড়লে আমি কি করব? আমার পক্ষে তো ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের বার বার খুঁজে বের করে দেয়া সম্ভব না। যাদের দায়িত্ব, সেই আনসার সদস্যরা কিছুই করছে না। তাদের বার বার বলার পরও বাইরের লোক ভিতরে ঢুকে পড়ছে।’

টেলিফোনে কথা বলা অবস্থাতেই তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি চলে যান। আমরা বিষয়টি দেখছি। এরপর কখনো ছবি তুলতে আসলে অনুমতি নিয়ে আসবেন।’

চিকিৎসক হাসান ইমামের কক্ষ থেকে বের হয়ে দেখা গেলো নিপ্পন পরিচয় দেয়া ওই কর্মী এবং আনসার সদস্যরা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের বের করে দিচ্ছেন। কিন্তু এ প্রতিবেদক আউটডোর থেকে বের হয়ে আবার আধাঘণ্টা পর সেখানে যান। গিয়ে আগের মতোই রোগীদের ঘিরে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকতে দেখেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020
Theme Developed BY ThemesBazar.Com