শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
ছয় বছর পর দখলমুক্ত কোর্ট ষ্টেশনের কোটি টাকা দামের বাড়ি জমকালো আয়োজনে সম্পন্ন হয়েগেলো ধর্মনগর ত্রিপুরায় কৃষ্ণ প্রিয়া আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব ২০২৪ হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে সুষ্ঠভাবে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত। হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের পরীক্ষার হল পরিদর্শনে আসেন শাবিপ্রবির ভাইস চ্যান্সেলর। প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে হকৃবি’র বাজেট ঘোষণা আন্তর্জাতিক সম্মাননা “টেরি বেকার” পুরস্কার পেলেন হবিগঞ্জের তোফাজ্জল সোহেল আকাশে ড্রোন দিয়ে ইমোজি তৈরির বিশ্ব রেকর্ড হবিগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিউনিটির কার্যকরী কমিটি গঠন। কালচারাল অফিসার অসিত বরণের অপসারণের দাবিতে সিলেটে গণস্বাক্ষর হবিগঞ্জ জেলার উন্নয়ন ও সেবার মনোভাব নিয়ে জনগনের পাশে থাকতে চাই- নবাগত জেলা প্রশাসক ড. মোঃ ফরিদুর রহমান

পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্কেল প্রথার আড়ালে বঞ্চনা ও সাম্প্রদায়িকতা

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৪৮২ বার পঠিত
ফাইল ছবি

প্রবাদ আছে “ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার”। কালের বিবর্তনে প্রবাদটির বাস্তব রূপ এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন স্ব-ঘোষিত রাজার বেলায়। এরা নিজেরা নিজেদেরকে রাজা বললেও আইন অনুযায়ী এদের প্রকৃত পদের নাম ‘সার্কেল চিফ’। বৃটিশ শাসনামলে চিটাগাং হিল ট্রাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ আইন বা চিটাগাং হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়েল এর ক্ষমতাবলে এই পদের সৃষ্টি হয়। দূর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য এবং চাকমা বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেল বা অঞ্চলে বিভক্ত করে তারা। চাকমা সার্কেল চিফের অধীনে রাঙামাটি, বোমাং সার্কেল বান্দরবানে আর মং সার্কেলের অধীনে খাগড়াছড়ি জেলাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই থেকে চালু হয় সার্কেল প্রথা। সেই থেকে ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ আমলে তারা সার্কেল চিফ নামেই অভিহিত হয়ে আসছে। শান্তিচুক্তিতেও তাদের সার্কেল চিফই বলা হয়েছে।

তবে নিজ সার্কেলে বসবাসকারী জনগণের কাছে তারা নিজেদেরকে রাজা বলেই পরিচয় দেয়। যা Chittagong Hill Tracts Regulation 1/1900 এর ৩৫ নং আইন এবং অন্যান্য বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিধি সম্মত নয়।

 

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা এদেশ থেকে চলে যাওয়ার পরেও সার্কেল চিফরা তাদের এই প্রথা চালু রেখেছিলো। সমতলের জমিদার প্রথার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্কেল প্রথার ভিন্নতা রয়েছে। সমতলের জমিদারদের জমি কেনা বেচার অধিকার থাকলেও সার্কেল চিফদের জমির মালিকানা ছিলো না। ১৯০০ সালের আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জমির মালিক সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক। সার্কেল চিফরা হলো তাদের উপদেষ্টা ও পরামর্শক। পাকিস্তান আমলে জমিদারী অধিগ্রহণ আইন করার পর জমিদারদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্কেল প্রথা চালমান রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে সরকারের পক্ষে ট্যাক্স আদায় করাই তাদের মূল দায়িত্ব। একই সাথে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীগুলোর প্রথাগত আইনে সামাজিক বিচার-শালিস করার দায়িত্বও তাদের। উচ্চ শিক্ষিত এবং আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এর প্রয়োজনীয়তা ফিকে হয়ে এলেও পার্বত্য তিন জেলায় এখনো টিকে আছে এই সার্কেল প্রথা।

প্রতি বছর সার্কেল চীফরা তাদের অধীনস্ত এলাকার অধিবাসীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে। এর থেকে নামমাত্র একটা অংশ সরকারী কোষাগারে জমা দেয় আর বড় অংশই যায় তাদের ব্যক্তিগত কোষাগারে। নিজেদের কোষাগারকে আর্থিকভাবে হৃষ্টপুষ্ট করার এই বাণিজ্যের কারনেই তারা নানান ধরনের অযুহাত আর আইন দেখিয়ে এই সার্কেল প্রথা চালু রেখেছে।

দেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জায়গা-জমি ক্রয়-বিক্রয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সরকারী চাকরীতে আবেদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে নাগরিকত্বের সনদ বা স্থায়ী বাসিন্দা সনদ (Permanent Resident Certificate) দাখিল করতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবন এবং খাগড়াছড়ি ছাড়া দেশের অন্য সকল জেলায় এই সনদপত্র সাধারণত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা পৌর মেয়র বা কাউন্সিলরের কর্তৃক করা হয়ে থাকে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সার্কেল চিফগণ এই সনদপত্র প্রদান করে থাকেন।

 

সার্কেল চিফগণ যেহেতু উপজাতি সম্প্রদায়ের তাই এক্ষেত্রে উপজাতিরা সহজেই এ সকল সনদপত্র পেলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিরা প্রায়শঃই এই সনদপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত ও দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বাঙালিরা সঠিক দলিল বা কাগজপত্র উপস্থাপন করার পরও তাদের দাখিলকৃত দলিল বা কাগজপত্রে ভুল বা অসংগতি রয়েছে বলে উল্লেখ করে সার্কেল চিফগণ কৌশলে বাঙালিদের সনদপত্র প্রদানে বিরত থাকেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালি অপসারণ ও বিতাড়ন উপজাতিদের বহু পুরানো বাসনা। বাঙালিদের প্রতি সার্কেল চিফদের এহেন বৈষম্য তারই অন্যতম বহিঃপ্রকাশ।

সার্কেল চিফগণ স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র প্রদানে যে ফরম ব্যবহার করেন সেখানে তারা নিজেদেরকে রাজা হিসেবে উল্লেখ করেন যা Chittagong Hill Tracts Regulation 1/1900  এর ৩৫ নং আইন অনুযায়ী বিধি সম্মত নয় এ কথা পূর্বেই বলেছি। এছাড়াও, বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মোতাবেক ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সার্কেল চিফগণ তাদের সনদপত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করছেন।

বাঙালিরা সনদ আনতে গেলে তাদের সনদ না দিয়ে বলেন যে, সনদপত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি মুদ্রিত আছে তাই এটি বাঙালিদের জন্য প্রযোজ্য নয়। সার্কেল চিফগণ তাদের সনদপত্রের ফরমে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ সংবিধানের অবমাননা করছেন।

সম্প্রতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক চিঠিতে সার্কেল চিফদের সনদপত্রের ফরমে সংবিধান পরিপন্থি ‘আদিবাসী’ শব্দটি পরিহার করে সংবিধানে উল্লেখিত ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’, ‘নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ শব্দগুলো ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধান এবং বিভিন্ন সরকারি প্রজ্ঞাপনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সার্কেল চিফগণ কর্তৃক ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার এবং উপজাতি সংগঠণগুলোর নানান ধরনের আদিবাসি দাবীর তৎপরতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি জনগোষ্ঠী সার্কেল চিফগণের সনদপত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার এবং তাদের সনদপত্র প্রাপ্তির জটিলতার ক্ষেত্রে এই আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন হবার আগ পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছে না। একই সাথে তারা দাবী করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্কেল প্রধানদের স্বঘোষিত রাজা দাবী করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020
Theme Developed BY ThemesBazar.Com