বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
বি.সি.জি বাংলাদেশ কুচিপুড়ি ডান্স এসোসিয়েশন ও নৃত্যকুড়ি নৃত্যালয়ের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী উদযাপন। বাংলাদেশ বাউল সমিতি হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নতুন কমিটি গঠন। সাজিদ পরদেশীকে সভাপতি, এম এ বাছিত সাধারণ সম্পাদক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত উচ্চাঙ্গ নৃত্যের প্রশিক্ষক, অভিযোগ অনিয়মের। হবিগঞ্জ নারী উদ্যোক্তাদের ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত। হবিগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিউনিটির উপদেষ্ঠা সাইফুদ্দিন জাবেদকে সংগঠনের নতুন কার্যকরী কমিটির ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান। বানিয়াচং উপজেলা প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত যাত্রী এবং ড্রাইভারদের মধ্যে বাকবিতন্ডা, বাড়ছে জনদূর্ভোগ। হবিগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিউনিটির প্রধান উপদেষ্ঠা জিয়াউল হাসান তরফদার মাহিনকে সংগঠনের নতুন কার্যকরী কমিটির ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান। ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং এবং ভাষা প্রশিক্ষণকোর্সের হবিগঞ্জ জেলা’র সকল শিক্ষার্থীদের বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে অযুক্তিকভাবে টমটম ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে হবিগঞ্জ যাত্রী কল্যান পরিষদের বয়কট

অনিয়ন্ত্রিত চিংড়ি রেণু আহরণে হুমকিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৪৬৫ বার পঠিত
ফাইল ছবি

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকা থেকে চিংড়ি রেণুপোনা ও কাঁকড়া আহরণ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন অঞ্চলের জেলেরা। কিন্তু এগুলো আহরণ করতে গিয়ে তারা বিনষ্ট করছেন অন্যান্য প্রজাতির মাছ ও অণুজীব। মূলত, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে তারা চিংড়ি রেণুপোনা ও কাঁকড়া সংগ্রহ করে জালে উঠা অন্যান্য মাছের পোনা ও অণুজীব ফেলে দেন। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সেখানকার জীববৈচিত্র্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,জেলেদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাদের এ বিষয়ে কোনও প্রশিক্ষণও নেই। চালানো হয় না কোনও প্রচারণা। প্রশাসনেরও এ নিয়ে কোনও নীতিমালা নেই। তাদের মতে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে রেণুপোনা আহরণের কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট এবং বাস্তুসংস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে অনেক অণুজীবের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের ওপর।
সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৮০-র দশক থেকে নদী থেকে লোনা পানি নিয়ে ঘেরে চিংড়ি চাষ করা হয়। বিশেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, রমজানগর, কৈখালী, কাশিমাড়ী এলাকায় ১০ হাজারের বেশি মাছের ঘের এবং এক হাজারের বেশি কাঁকড়ার খামার আছে। এসব ঘেরে সুন্দরবন থেকে আহরিত চিংড়ি রেণুর চাহিদা অনেক। ফলে জেলেরা সুন্দরবনের নদী থেকে ঘন জাল ব্যবহার করে চিংড়ি সংগ্রহ করেন। পরে চিংড়ি রেণু বেছে আলাদা করে জালে থাকা অন্যান্য মাছের পোনা ও অনুজীবগুলো মাটিতে ফেলে দেন জেলেরা। ফলে সেগুলো মারা যায়।
সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিংড়ি মাছের সঙ্গে অন্যন্যা মাছ বা অনুজীবগুলো জেলেরা পানিতে না ফেলে মাটিতে ফেলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নজর না দেওয়ায় জেলেরা এটি বেশি করে করছেন। ফলে প্রতিদিনই ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ও অনুজীব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল এই এলাকার মানুষ। গত কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে চিংড়ির ঘের। আর এসব ঘেরে যোগান দিতে সুন্দরবন থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে আহরণ করা হয় রেণু। এতে সুন্দরবনের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক হ্যাচারিতে রেণুপোনা ও কাঁকড়া উৎপাদন করা হলেও তা সুন্দরবন থেকে আহরিত রেণুর মতো ভালো হয় না। সেজন্য ঘের মালিকদের প্রথম পছন্দ সুন্দরবন থেকে আহরিত রেণু। সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁকড়া ও রেণু পোনার দাম বেশি হওয়ায় জেলেরাও তা সংগ্রহে আগ্রহী হন।

 

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ ন ম গাউছার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে মানুষের যাতায়াতের ফলে প্রাণীদের স্বাভাবিক বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে এসব প্রাণীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। আর মানুষের উপস্থিতিরি ফলে প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।’
স্থানীয় পরিবেশ গবেষক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে রেণু আহরণ করায় এক সময় বিভিন্ন জাতের মাছ ও প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে। তাই এখনই এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিংড়ির রেণু ও ছোট কাঁকড়া আহরণের কোনও নীতিমালা না থাকায় জেলেরা ইচ্ছামতো সেটা আহরণ করেন। ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হচ্ছে। কারণ রেণু ও কাঁকড়া খাদ্যশৃঙ্খলের প্রথম সারির প্রজাতি। আর প্রথম সারির এই প্রজাতিকে ব্যাপকভাবে আহরণের ফলে এদের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য শ্রেণির জীবও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে জলজ ও ফলজ বাস্তুসংস্থানের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়া ‍শুরু করেছে।’
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষরা না বুঝে রেণুপোনা আহরণের পর অন্যান্য অণুজীব ধ্বংস করছেন। উপজেলা প্রশাসন এই বিষয়ে বেশ সচেতন। সেজন্য এই অঞ্চলের মানুষকে সচেতন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘সম্প্রতি শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণের ঘের সংক্রান্ত নীতিমালা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি নীতিমালা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকায় বেশ কয়েকটি হ্যাচারি গড়ে উঠায় আগের তুলনায় কাঁকড়া ও চিংড়ি রেণু আহরণ কমেছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020
Theme Developed BY ThemesBazar.Com