আরামবাগ যেতে চালক ভাড়া হাঁকলেন সাড়ে চারশ টাকা। পর পর তিনটির সঙ্গে সাথে দর কষাকষি শেষে সাড়ে তিনশ টাকায় চতুর্থটায় উঠলেন তারা।
তেলের দাম দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে পরিবহন ধর্মঘটের সারা দেশের মানুষকে যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে, তার ব্যতিক্রম ঘটেনি আরামবাগের পিতাপুত্রের ক্ষেত্রেও; ভাড়া গুণতে হয়েছে স্বাভাভিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
শনিবার সকালে সিঁড়ি থেকে পড়ে ছেলের হাত ভেঙে যাওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন আবু তালেব। বাস না চলায় বাধ্য হয়েই হাসপাতালে যাতায়াতে এতো খরচ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন বলেন, “সকালে একটা সিএনজিতে আসছি, ভাড়া রাখছে সাড়ে তিনশ টাকা। আরামবাগ থেকে ঢাকা মেডিকেলের ভাড়া অন্য সময়ে নেয় দেড়শ থেকে দুইশ। ফেরার সময়েও যাইতেছি তিনশ টাকায়।
“ধর্মঘটের কারণে আমরা গরিবেরা কেন বিপদে পড়ুম?”, ক্ষোভ ও আক্ষেপ ঝড়ে পরে তার কণ্ঠে।
সরকার বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন। সে অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকেই সারাদেশে বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
শুক্র-শনি ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে যাওয়ায় এই দুই দিন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগেও শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল রোগীদের ভীড়। তাদের বেশিরভাগই কাছাকাছি এলাকা থেকে এলেও এর মধ্যে বেশ কয়েকজন এসেছেন ঢাকার বাইরে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে।
চক্ষু বহির্বিভাগের সামনে বাবার চোখ দেখানোর জন্য বসে ছিলেন সাইনবোর্ড থেকে আসা তুহিন ইসলাম। তারও প্রশ্ন, সরকার তেলের দাম বাড়ালে তার জন্য জনগণকে কেন ভুগবে।তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “অনেকদিন যাবতই বাবার চোখে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেজন্য মেডিকেলের আউটডোরে বাবার চোখ পরীক্ষা করার জন্য এসেছি।
“বাস বন্ধ থাকায় সিএনজিতে আসতে হয়েছে। ভাড়াও বেশি রাখছে আজকে। যেহেতু তেলের দাম বেড়েছে, সামনে বাসভাড়াও বাড়বে। এতে আমাদের মত সাধারণ মানুষেরই দুর্ভোগ।”
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে রোজ বাস থামলেই রোগীদের বাস থেকে নেমে বারডেম হাসপাতালে ঢুকতে দেখা যেত। কিন্তু শনিবারের চিত্র ছিল প্রায় একেবারে ভিন্ন। অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেটকার থামছে, সেখান থেকে নামছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
কিডনির সমস্যাজনিত বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে এক সপ্তাহ যাবত বারডেমে ভর্তি আছেন রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা জিয়াসমিন সেতুর নানী। নানী ও তার সঙ্গে হাসপাতালে থাকা মায়ের জন্য বাসে করে খাবার নিয়ে যান সেতু ও তার ভাই। ধর্মঘটের কারণে বাড়তি পয়সা খরচ করে মোটরসাইকেলে আসতে হয়েছে।
জিয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেখানে বাসে বিশ-ত্রিশ টাকায় যাতায়াত সম্ভব, সেখানে মিরপুর থেকে পাঠাওয়ের খরচ পড়ে যাচ্ছে অনেক অনেক বেশি। কতদিন এই ধর্মঘটের কারণে সমস্যায় পড়তে হবে কে জানে!”
Leave a Reply